সুফি সাধক শাহ্‌ মুখদুম রুপসের মাজার

চতুর্দশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ধর্ম প্রচারক ও সুফি সাধক শাহ্‌ মুখদুম রুপোশ রাজশাহী অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। শাহ্‌ মুখদুমের প্রকৃত নাম আব্দুল কুদ্দুছ জালালউদ্দিন। ‘মুখদুম’ শব্দটির শাব্দিক অর্থ ধর্মীয় নেতা রুপশ শব্দটির শাব্দিক অর্থ আচ্ছাদিত। কথিত কথা হতে জানা যায় যে, তিনি তার মুখমণ্ডল কাপড় দিয়ে আবৃত রাখতেন যা প্রচলিত একটি কাহিনি থেকে জানা যায়, এজন্য তার নামকরণ এর সাথে রুপস সংযুক্ত করা হতো।

১২১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন ও ১৩১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি পরলোক গমন করেন। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষে ও চতুর্দশ শতাব্দীর শুরুর দিকে তিনি রাজশাহী ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। 

হযরত শাহ্‌ মুখদুম ছিলেন হযরত হযরত (রাঃ) এর বংশধর। তিনি তার বড় ভাইয়ের(সৈয়দ আহমেদ ওরফে মিরন শাহ্‌) সাথে ১২৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের বাগদাত হতে বাংলাদেশে চলে আসেন। এরপর কাঞ্চনপুরের নিকটে একটি খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। 

তার সম্পর্কে আরও জানা যায় যে, তিনি কুমিরের পিঠে চড়ে রাজশাহীতে আসেন। নদীও পার হতেন এই কুমিরের পিঠে বসে, এছাড়াও তার ছিল অপ্রাক্রিতিক শক্তি যা দিতে বন্য বাঘ পর্যন্ত শিকার করতেন। শাহ্‌ মুখদুমের কবরের পাশেই কুমিরটির কবরটির অবস্থান। 

মাজারে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি প্রধান ফটক, ফটকের মাথার উপরে আরবি হরফে কিছু খোদিত রয়েছে । ফটকের বাম পার্শে রয়েছে একটি কক্ষ ও ডান পার্শে পরিছন্নতার জন্য রয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টিত বিশেষ স্থান। সেইখান থেকে একটু এগুলেই রয়েছে শাহ্‌ মুখদুম মাজার, মাজার স্থানে রয়েছে  আব্দুল কুদ্দুছ জালালউদ্দিন ওরফে শাহ্‌ মুখদুম রুপস এর কবর ও কুমিরের কবর। মাজারের মাথার উপর একটি  ও ছোট ছোট ৩ টি স্থম্ভ মিনার রয়েছে, যেটি খুদ্র খুদ্র টাইএলসের টুকরো দিয়ে নকশা করা। মাজারে ৪ টি পত্রক আকৃতির দরজা বিদ্দমান।  

এর ঠিক পাশেই রয়েছে নামাযের জন্য বিশেষ স্থান (মসজিদ)। মাজার ও মসজিদ সংলগ্ন একটি সুবিশাল পুকুর রয়েছে, যা ২ টি সিঁড়ি ও লোহার নকশা করা গ্রিল দ্বারা চতুর্দিক পরিবেষ্টিত। পূর্বে এই পুকুরটি অত্র এলাকার পানির চাহিদা পূরণ করতো। বর্তমানে এটি নামাযের অজুর কারজে ও বাহারি মাছের চাষ হয়ে থাকে। 

সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজে বহু মুসল্লির সমাগম এইখানে। শাহ্‌ মুখদুম দরগায় প্রতি বছর ১০ম মহররমের মেলা অনুষ্ঠিত হয়, সেই সাথে তলোয়ার যুদ্ধের মহড়া ও লাঠি খেলার আয়োজন করা হয়। বহু ধর্মানুরাগী নিজেদের মনবাসনা পুরনের জন্য মানত করে থাকেন। সারা বছর এইখানে বহু জনমানবের সমাগম হয়। 

পূর্বে এটি ফরাসি ভাসায় প্রকাশিত হলেও ১২৪৫ সনে শাহ্‌ মুখদুম সম্পর্কিত একটি গ্রন্থ রচিত হয় যা ‘জীবনী তায়ারীখ’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। ডঃ মুহম্মদ সহিদুল্লাহ গ্রন্থটিকে প্রাচীনতম বাংলা গদ্য রচনা হিসেবে আবিভুত করেছেন। রাজশাহী নগরীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান ও ইসলামিক স্থাপত্য এই শাহ্‌ মুখদুম রুপস এর মাজার। পূর্ব হতে বর্তমান পর্যন্ত প্রতিদিন বহু দর্শনার্থী ও ইসলাম ধর্মানুরাগীরা এই মাজার দর্শনে আসেন। এটি রাজশাহীর অন্যতম ইসলামিক ঐতিহ্যের নিদর্শন।  

স্থাপত্যঃ শাহ্‌ মুখদুম মাজার 

বিকল্প নামঃ শাহ্‌ মুখদুম রুপসের মাজার 

প্রতিষ্ঠাতাঃ আব্দুল কুদ্দুছ জালালউদ্দিন।

বিভাগঃ রাজশাহী

জেলাঃ রাজশাহী

উপজেলাঃ রাজশাহী 

অবস্থানঃ দরগাপারা 

পোস্ট/ ডাকঘরঃ বোয়ালিয়া 

দেশঃ বাংলাদেশ

অঞ্চলঃ উত্তরাঞ্চল 

উপাদানঃ ইট, সিমেন্ট, টাইলস 

কবর সংখাঃ ২ টি 

পুকুর সংখ্যাঃ ১ টি 

সম্পর্কিত গ্রন্থঃ ‘জীবনী তায়ারীখ’

গ্রন্থ প্রকাশকালঃ ১২৪৫ সন 

প্রশাসনঃ বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর

হযরত তুরকান শাহ্‌ মাজার শারিফ/ শাহ্‌ মুখদুম রুপস মাজার

Check Also

রাজশাহীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিশ্লেষণ

রাজশাহী বাংলাদেশের নান্দনিক ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা ও বিভাগ। “সিল্ক সিটি” ও “ম্যাঙ্গো সিটি” …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *