রাজশাহী বিভাগের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা কুসুম্বা মসজিদ

রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কুসুম্বা নামক গ্রামে প্রাচীন এক অসাধারণ ইসলামিক স্থাপত্য শৈলী নির্মিত হয়েছিলো, নাম কুসুম্বা মসজিদ । 

আত্রাই নদীর পশ্চিমতীর ঘেসে নির্মিত এই স্থাপনাটি স্থানীয় গ্রামের নাম অনুসারে পরিচিতি  লাভ করে/ নামকরণ করা হয় । মসজিদটিতে প্রবেশের জন্য একটি চমৎকার প্রধান প্রবেশদ্বার রয়েছে ।চারিদিকে মাঝারি ধরনের দেওয়াল পরিবেস্থিত আঙ্গিনার মধভাগে/মাঝখানে মসজিদটির অবস্থান । 

৯০৪ হিজরি বা ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের সময়কালে 

তার প্রশাসনিক কর্মকর্তা অর্থাৎ মন্ত্রী কুসুম্বা মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন।

আফগানি শাসন আমলে, শূর বংশের প্রায় শেষের দিকের শাসক গিয়াসুদ্দিন বাহাদুর শাহ এর রাজত্বকালে এই অসাধারণ স্থাপত্যটি জনৈক সোলাইমান নির্মাণ করেছিলেন । ধারণা করা হয় তিনি  একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। 

এটির স্থাপিত সময় ১৫৫৮-১৫৫৯ খ্রিস্থাব্দ, অর্থাৎ হিজ্রি সাল অনুযায়ী ৯৬৬ সালে, যেটি মসজিদের প্রধান প্রবেশদ্বারের উপরে স্থাপিত সিলালিপিতে খোদাই করা আছে। মসজিদটির বর্তমান বয়স ৪৬২ বছর । মসজিদটির কেন্দ্রীয় ১ টি প্রবেশপথ, এছাড়া স্থাপনাতির সম্মুখে ৩ টি যেটি পূর্ব দিক বরাবর ও উত্তরে ১ টি  এবং দক্ষিনে ১টি প্রবেশপথ রয়েছে। এটির প্রধান প্রবেশদ্বারে প্রহরী চৌকি ছিল ।

মুলত এটি ইট, পাথর, রডের তৈরি ধূসর বর্ণের একটি স্থাপনা । ৬টি গম্বুজ ও ৪ টি মিনার এর সমন্বয়ে গঠিত মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৫৮ ফুট (১৮ মিটার) ও প্রস্থ ৪২ ফুট (১৩ মিটার) ও দেওয়ালের পুরুত্ত ৬ ফুট।

যদিও মসজিদটি শূর আমলে নির্মিত তবুও এর স্থাপত্য শৈলী বাংলা রীতিতে নির্মিত । সুনিপুন ইটের গাঁথুনি সামান্য বক্র করনিশ, সাথে অস্থকনাক্রিতি  পারশবুরুজ প্রভৃতি এ রীতিটির বৈশিষ্ট্য । 

গঠন প্রণালী অনুযায়ী স্থাপনাটির  মূল গাঁথুনি ইটের তৈরী হলেও  ভিতর ও বাইরের দেয়াল সম্পূর্ণ অসাধারণ কারুকার্য বেষ্টিত পাথর দ্বারা নির্মিত । এটির মেঝে, ভিত্তিমঞ্চ, ৪তি স্তম্ভ, দেয়াল গুলো নকশাকৃত পাথরের তৈরি। আকৃতির দিক থেকে আয়তাকার মসজিদটির ৩ টি বে ও ২টি আইলের অন্তর্গত/ বেষ্টিত ।  মসজিদটির অভ্যন্তরে মঞ্চ অবস্থিত যেটিতে  পূর্ব দিকে সিঁড়ি দ্বারা উপনিবেশ করা সম্ভব । সূক্ষ্ম কারুকার্য খচিত নকশা মসজিদটির সন্ধরঝ বহুগুন বারিয়ে দিয়েছে ।

প্রতিটি স্তম্ভের গায়ে রয়েছে ঝুলন্ত ঘণ্টার অবয়ব/ প্রতিকৃতি  নকশা/ ডিজাইন ।  মিহরাবের গায়ে ফুল, লতা, আঙ্গুরগুসচ্ছ নকশাগুলো বাঁকানো সর্পিল আকারে দেখা যায়। এছাড়াও  বৃক্ষলতা, গোলাপ,কলসসহ বিভিন্ন নকশার অলংকরণ স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়। সম্পূর্ণ মসজিদের দেওয়ালে অতি সূক্ষ্ম কারুকার্য দ্বারা নকশা বেষ্টিত। 

 ছাঁচে ঢালা নকশাগুলো দেওয়ালের গাত্রকে উচু নিচু অংশে বিভক্ত করেছে ।

১৮৫৯ সালের ভুমিকম্পের ফলে ৩ টি গম্বুজ নষ্ট হয়ে যাই । পরবর্তীতে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর গম্বুজ গুলোর সংস্কার করেন। মসজিদের কোল ঘেঁষে পূর্ব পার্শ্বে একটি দীঘি অবস্থিত । ২০১৭ সালের দিকে মসজিদের কিছু  সংস্কার কাজ এবং দিঘির পাড়ে ফুলের বাগান নির্মাণ ও আলোকসজ্জার বাবস্থা করা হয় । বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলা হতে ৪ মাইল উত্তর পশ্চিমে মান্দা নওগাঁ রাজশাহী মহাসড়কের পার্শে মসজিদটির অবস্থান । 

মসজিদটির সম্মুখে বিশাল একটি জলাশয় রয়েছে । স্থানীয় ভাষায় এটিকে দিঘি বলে। অবস্থানগত দিক দিয়ে মসজিদের পূর্ব পার্শে এটির অবস্থান । দিঘিটির আয়তন ২৫.৮৩ একর। নামাজের অজু, গোসল ছাড়াও জলাশয়টি স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন কাজে ব্যাবহার করে ।

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কুসুম্বা নামক গ্রামের ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি শিলালিপি আবিষ্কার করেন রাজশাহী জেলা পরিষদের অভারশেয়ার/ সুপারভাইজার সুরেন্দ্র মোহন চৌধুরী ।  বর্তমানে শিলালিপিটি অবস্থান বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে।

স্থাপনাটির প্রবেশপথের একটু দূরে পথের পার্শে চতুষ্কোণ বাক্স আকৃতির এক কালো বর্ণের পাথরখণ্ড দেখা যায়। এই পাথর খণ্ড সম্পর্কে কেও সঠিক তথ্য দিতে পারে নি। তবে এলাকার জনগণ এটিকে কবর বলে  ধারণা করেন। এলাকার জনগনের কথিত ভাষায় এই পাথর খণ্ডটি কেউ সেই স্থান হতে স্থানচ্যুত করতে পারে নি ।

বাংলাদেশের মুদ্রনে ৫ টাকার নোট এ এই মসজিদের ছবি উল্লেখ আছে । বহু পর্যটক ঐতিহাসিক স্থাপনাটি দেখতে আসে । 

বিভাগঃ রাজশাহী

জেলাঃ নওগাঁ

উপজেলাঃ মান্দা

গ্রামঃ কুসুম্বা

পোস্টঃ মান্দা

ইউনিয়নঃ ৮ নং কুসুম্বা

দেশঃ বাংলাদেশ

অবস্থানঃ কুসুম্বা, মান্দা, নওগাঁ, রাজশাহী

ধরনঃ মসজিদ

স্থাপত্যঃ ইসলামিক শৈলী 

সৃষ্টিক্রিত সময়ঃ ১৫৫৮-১৫৫৯ খ্রিস্থাব্দসৃষ্টিকারী/ নির্মাণকর্তা সোলাইমান/ সবরখান

আকৃতিঃ আয়তাকার চতুর্ভুজ  

দৈর্ঘ্যঃ ৫৮ ফুট (১৮ মিটার) 

 প্রস্থঃ ৪২ ফুট (১৩ মিটার) 

 পুরুত্বঃ ৬ ফুট

গম্বুজঃ ৬ টি 

মিনারঃ ৪ টি

উপাদানঃ ইট, পাথর, রড 

স্থানাঙ্কঃ ২৪.৭৫৩৭৫৩ উত্তর

      ৮৮.৬৮১২৪৭ পূর্ব

অঞ্চলঃ উত্তরাঞ্চল 

দীঘির পরিমাপঃ প্রায় ৭৭ বিঘা 

দীঘির উচচতাঃ প্রায় ১২০০ ফুট ও ৯০০ ফুট 

প্রশাসনঃ বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর

Check Also

রাজশাহীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিশ্লেষণ

রাজশাহী বাংলাদেশের নান্দনিক ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা ও বিভাগ। “সিল্ক সিটি” ও “ম্যাঙ্গো সিটি” …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *